ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের অনেক নারী আজ তাঁদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সৃষ্টিশীল কর্মের সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার (নিড) নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম নারীদের স্বাবলম্বী করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাধীন কলেজপাড়া এলাকায়।
২০২০ সালে অনলাইন প্লাটফর্ম (নিড) যাত্রা শুরু করে। গ্রুপটির মাধ্যমে প্রায় শতাধিক নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে এবং এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৫৫ হাজার যারা নিয়মিত এই গ্রুপ থেকে কেনাকাটা করে। ক্রেতারা এই গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কুশন, পাটজাত পণ্য, শো-পিচ, গায়ে হলুদের গহনা ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে।
গ্রামাঞ্চলের নারীরা ঘরে বসে এগুলো তৈরি করে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে সেই মাধ্যমটা সানজিদা শারমিন সেতু তৈরি করে দিয়েছে। তিনি তাদের শেখাচ্ছেন, কাজের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তাদের কাজ করতে সহযোগিতা করছেন এবং সেই পণ্যগুলো বাজারে বাজারজাতকরণের চেষ্টা করছেন।
তার এই সংগ্রাম যুদ্বের গল্পের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আরো একটি রুপকথা, সেতু সাধারণ নারীদের কথা ভেবে একটি ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে প্রথমত ২০ জনকে নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করে। যেটি বর্তমানে ১০০ জনেরও অধিক নারী এখান থেকে কাজ শিখেছে। ৪০ জন মহিলা নিয়ে তার এই ছোট রুমগুলোতে কোনরকম কাজ করে আসছেন। তাও আবার কাজ করার সেলাই মেশিন একটি মাত্র। এটি দিয়ে কোনমতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
স্বপ্ন অনেক বড় কিন্তু মেশিনের স্বল্পতা, জায়গার স্বল্পতার কারণে অনেক বেশি মহিলাদের নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না সেতুর। তার উৎপাদিত পণ্যগুলো কেনার মতো অনেক মানুষ আছে, বাজারে চাহিদাটাও কম নয় কিন্তু সে তুলনায় পণ্য উৎপাদনের জায়গা ও অর্থের যোগান দেওয়া তার সাদ্ধের বাইরে।
দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রমী সেই নারী উদ্যোক্তা সেতু জানান, নারীদের কথা ভেবে শুরু থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছি। অনলাইন ভিত্তিক ফেইসবুক গ্রুপ যেখানে ৫০ জনেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা কাজ করে, ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবারের আওতাধীন নিড প্রশিক্ষণ প্রকল্প যেখানে বিভিন্ন নারীরা হস্তশিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। সেখানে গ্রুপের উদ্যোক্তারায় ট্রেইনার হিসেবে নারীদের ট্রেইনিং করে থাকেন। ১০ জন অসহায় মহিলারা কুশন সহ অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করে এখন স্বাবলম্বী। তারা দৈনিক তিন থেকে চার ঘণ্টা কাজ করে।
আমি এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনভাবে কিছু সহযোগিতা পাইনি। আমি আশা করবো আমার এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঠাকুরগাঁওসহ দেশের একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কেউ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ঠাকুরগাঁওয়ের নারীরা মাথা তুলে দাড়াতে পারে এবং আমরা সকলকেই দেখিয়ে দিতে পারবো যে আমরা নারীরা অনেক কিছু করতে পেরেছি। সেই জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
স্থানীয়রা জানান, সানজিদা শারমিন সেতু খুব পরিশ্রমি একজন নারী উদ্যোক্তা। আমরা দেখেছি তার এখানে ছোট বড় অনেক নারী আনন্দের সাথে কাজ করে এবং এখন পর্যন্ত অনেক নারীই নিজেদের পায়ে দাড়িয়েছেন। তবে তার প্রতি যদি সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে তার এই অনলাইন প্লাটফর্ম আরো অনেক বেকার নারীকে স্বাবলম্বী গড়ে তুলবে বলে আশা করেন তারা।
এদিকে সানজিদা শারমিন সেতুর প্রসংশা করে ঠাকুরগাঁও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপ পরিচালক কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার নিরঞ্জন কুমার বলেন, আমরা জেনেছি সানজিদা শারমিন সেতু নামে একজন অনলাইন নারী উদ্যোক্তা যিনি সুন্দর সুন্দর কুশন, শো পিচ সহ বিভিন্ন পাটজাত পণ্য তৈরি করছেন। তার পণ্যগুলো খুবই সুন্দর। তার পণ্যগুলোর ভাল চাহিদা রয়েছে। তিনি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার পণ্যগুলো বিক্রয় করে থাকে। তাকে আমরা স্বাগত জানায় এবং তিনি যদি আমাদের কাছে এসে সহযোগিতা চান আমরা সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো: শামসুজ্জামান জানান, ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার একটি নতুন মার্কেটপ্লেস হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং বেশকিছু নারী উদ্যোক্তা তাদের উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যেখানে বেশকিছু নারী উদ্যোক্তাও গড়ে উঠেছে। তারা এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসটিকে আরো উন্নত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। এর মাধ্যমে নারীরা আর্থ সামাজিক উন্নয়নের এবং নারী ক্ষমতায়নের ভূমিকা রাখবে এমনটি আশ্বাস দেন তিনি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।